Thursday, 17 June 2021

আমার সোনামণির ঘুম

            রাত সাড়ে এগারোটা বাজে, যাফিরের ঘুমের সময় এখন। বিছানায় ছড়া-কবিতা-গল্প বলে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো আমাদের অভ্যাস, যদি এরকম গুমাতে না চায় যাফির, তাহলে ওর বাবা কোলে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুম পাড়ান, এতে অবশ্য ও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে।

          আজ ও যাফিরকে ওর বাবা দ্বিতীয় পদ্ধতিটা প্রথমেই প্রয়োগ করলেন, প্রায় ৩০ মিনিটের মতো যাফিরকে কোলে নিয়ে হাটলেন, কিন্তু যাফিরের চোখে ঘুমের ছিঁটেফোটাও নেই, ও হাঁসছে আর সেই সাথে ঘুমের মাসি-পিসি আমাদের বাড়ি ছেলে পালাচ্ছে! 

           যাক, এবার আমার পর্ব শুরু, রুমটা আধো অন্ধকার করে যাফিরকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প শুনালাম পাঁচ মিনিট, তারপর কবিতা শুনালাম আরো দশ মিনিট, তবুও ওর চোখে শুধু আলো...... এরপর আরো দশ মিনিট ঘুমানোর দুয়া, সুরা পড়লাম ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে, সে সময় ও চুপচাপ হয়ে আছে। ঘুমিয়েছে ভেবে ওর হাতটা যেই ঠিক করতে যাবো অমনি যাফির আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে। ওর চাহনির মাঝে কেমন যেনো একটা হতাশা ভাব! আমার বুঝতে বাকি রইল না কিছু! যাফিরকে আদুরে কন্ঠে বললাম, বাবা তুমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর, ইনশাআল্লাহ ঘুম আসবে। যাফির আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। প্রায় এক মিনিট পর ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল! আমি বুঝতে পারলাম যে আমার ছেলেটা এই মূহূর্তে অসহায় বোধ করছে, কারণ মা-বাবা দুজন মিলে ওকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন, এ জন্য হয়তো মনে মনে ও কষ্ট পাচ্ছে, তবে একবার ও যাফিরকে আমরা কেউই বলিনি যে তোমাকে ঘুমাতেই হবে।

           এবার আমি যাফিরকে আশ্বস্ত করে বললাম, "সোনামণি, তোমার কি ঘুম পাচ্ছেনা?" যাফির আস্তে আস্তে উত্তর দিল, "না"। বললাম "কোন সমস্যা নেই বাবা, তুমি কি উঠে পড়বে?" যাফির খুশি খুশি ভাব নিয়ে বলল, "উঠব"। আমি বিছানা থেকে নামার আগেই যাফির নেমে পড়ল। 

          এবার যাফির খুব খুশি। পাঁচ মিনিটের মত যাফির সারা ঘরে  দৌড়াদৌড়ি-লাফালাফি করেছিল। তারপর ওর বাবা বললেন, "চল আমরা ঘুমাই"। যাফির চনমনে ভাব নিয়ে বলল, "ঘুমাই"। এর কিছুক্ষন পর যাফির ঘুমিয়ে পড়ল।

           নাহ, যাফিরকে আমরা ভয় দেখাই নি, ওর ঘুমানোর জন্য কোন ও চাপ ও দেই নি, শুধু ওর রুঠিন মতো ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এতে যখন দেখলাম কাজ হচ্ছেনা, ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি, কারন এটা জানি যে আমার ছেলের ঘুম আসলে অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন ঘুম আসছেনা বলেই ঘুমাতে পারছেনা , এতে আমরা মোটেই বিরক্ত হইনি, উপরন্তু যাফিরের এই দোলাচল আমরা খুব উপভোগ করি।

         যাফিরকে ঘুমানোর জন্য যদি চাপ দিতাম, জোর জবরদস্তি করতাম, তবে এটা নিশ্চিত যে, আমার দুই বছরের বাচ্চাটার ঘুমের প্রতি একটা ভীতি কিংবা অনীহা ভাব চলে আসবে, এবং তা আমরা করিও না।

        আমরা যাফিরের সাথে যে আচরন করব, সেটাই ওর আচরনে প্রতিফলিত হবে! আমরা চাই আমাদের যাফির নির্ভয়ে বড় হোক, উপভোগ করুক এই জীবন সকাল।

        ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল শিশু।

                                  ১৭ জুন, ২০২১    

1 comment:

কবিতা : ঈদের চাঁদ

        ঈদের চাঁদ    খাদিজা নাওরীন ঈদের ঘোষণা দিল ঐ চাঁদ উঠে আকাশে, খুশির জোয়ার চলছে তাই  বাতাসে- বাতাসে। ঐ ঈদের চাঁদে যত খুশি লুকানো! প্রকা...