আমার যাফির এখন ভালোভাবেই হাটতে শিখেছে, আলহামদুলিল্লাহ! ও যখন হাঁটে, আমার প্রাণটা তখন পুলকিত হয়ে ওঠে, ভালোলাগায় ভরে যায় আমার হৃদয়! আমি অপলক তাকিয়ে থাকি ওর দিকে! আসলে আমার মনে হচ্ছে কি, ছেলেটার সাথে সাথে আমার মনটারও বিকাশ ঘটছে!
বড় হওয়ার পাশাপাশি যাফিরের চঞ্চলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনো কখনো যাফিরের দুষ্টুমি সামলাতে গিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হয়! কিন্তু আমি রাগ করিনা আমার ছোট্ট বাচ্চাটার উপর, রাগ করতে আমার ভীষণ ভয় হয়! কারণ, ওতো এখনো কিছু বোঝেনা! এবার আসি আসল কথায়--
আমি বাচ্চাদের বিষয় নিয়ে পড়তে খুব আগ্রহী, যখনই বাচ্চাদের নিয়ে কোনো লেখা চোখের সামনে পড়ে, পড়তে ভুল করিনা, ভালোই লাগে পড়তে। বাচ্চাদের নিয়ে ভাবতেও ভালো লাগে!
মানুষ এখন অনেক সচেতন। সবাই শিশুশ্রম, শিশু নির্যাতন...... ইত্যাদিকে না বলতে শিখেছে। কিন্তু, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমি খুব মর্মাহত হই। কখনো ফেসবুকের কোনো ভাইরাল ভিডিওতে চোখ আটকে যায়, সেখানে মা বেত হাতে নিয়ে তাঁর আড়াই বছরের শিশুকে লিখা শিখাচ্ছেন, বাচ্চাটি কাঁদতে কাঁদতে অস্তির! সে লিখতে চাচ্ছে না, মা আবার বাচ্চাটিকে মারছেন......., এসব তো গেল ফেসবুকের কথা.....
যখন স্কুলে যেতাম, বান্ধবীদের গল্পে উঠে আসত মা-বাবাকে লুকানোর নানা কাহিনী! অর্থাৎ মা-বাবাকে ভয় পাওয়া!
আবার বাস্তবে অনেক মাকে দেখেছি যে, তিনি তাঁর ছোট্ট বাচ্চাটাকে দরজা আটকে পিঠাচ্ছেন, তাঁর কারণ দুষ্টুমি! কেউ আবার বাচ্চাকে মারার কারণ জানতে চাইলে বলেন, "আমার বাচ্চা, আমি যা ইচ্ছা করব!" তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে, বাচ্চাটা বড় হয়ে যখন দোয়া করবে, "রাব্বিরহাম হুমা........" তখন এর কি অর্থ দাঁড়াবে!
অবশ্য আমি বাচ্চাদের শাসনের বিপক্ষে না, তবে নির্যাতনের বিপক্ষে। বাচ্চাদের শাসন হবে আদরের, কঠোরতার না।
কোনো কোনো মা আছেন, যারা নিজের রাগ তাদের ছোট্ট, অবুঝ বাচ্চার উপর ঝাড়েন। এতে বাচ্চার কোমল মনটার উপর কি প্রভাব পড়ছে তা তাঁদের একবারও ভাবায় না!
বাচ্চাদের প্রথম এবং শেষ আশ্রয় তাঁর বাবা-মা। সেই বাবা-মাকে যদি একটি বাচ্চা ভয় পায়, তবে সে বাচ্চার মনোজগত কিভাবে পরিপূর্ণ হতে পারে!
ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি শিশু, ভালো থাকুক আমার শিশু, "ভালো থাকুক আশপাশের শিশুগুলোও", এই ভাবনার উদয় হোক সব বাবা-মার। প্রাণ ভরে শিশুরা উপভোগ করুক এই জীবন-সকাল!
শিশুরা ভালোবাসায় বড়ো হোক, অবহেলায় নয়। তাঁরা ভালো শিখুক, মন্দকে মন্দ বলুক, ঘৃণাকে ঘৃণা করুক। প্রতিটি শিশুর জীবন সুন্দর হোক।
১৫.১০.২০২০
No comments:
Post a Comment