Tuesday, 29 June 2021

গল্পঃ ইফতারের আনন্দ

 ইফতারের আনন্দ
খাদিজা নাওরীন

সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। পাখিদের কিচির-মিচির বাড়ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রফিক সাহেব অস্ফুট উচ্চারণে বলে উঠলেন, "আ-রো এক ঘন্টা বাকি আছে ইফতারের।" পেটের ভেতরটা চোঁ চোঁ করে উঠল তার। হাতের নাগালেই পানির জগ আর গ্লাস রাখা আছে, কিন্তু খাওয়া যাবেনা একদম। কারণ, আর কেউ না দেখলেও তিনি তো ঠিকই দেখে ফেলবেন, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর রোযার প্রতিদান তো তারই হাতে। আল্লাহ বলেন, "রোযা আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।"
রান্নাঘর থেকে লোভনীয় ঘ্রাণ ভেসে আসছে রফিক সাহেবের কাছে, স্ত্রী তানিয়া ইফতারের জন্য রান্না করছেন। প্রতিদিন এ সময়টাতে সারা ঘর ভেসে বেড়ায় এমন ঘ্রাণ, ভালোই লাগে রফিক সাহেবের। কিছুক্ষণ রুমে পায়চারি করে ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দিলেন বিছানায়। তার সাড়ে তিন বছরের ছেলে ইফাদ গিয়ে বাবার শিয়রে বসল, বসে বাবার চুলগুলো এলোমেলো করতে লাগলো, ভালোই লাগছিল রফিক সাহেবের। ছোট্ট এই হাতগুলোর ছোঁয়াতে ঘুমে চোখ বুজে আসল তার। ইফাদ আরো কয়েক মিনিট বাবাকে এরকম আদর মাখিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, “ মা, আমি সেমাই খাব”। মা তানিয়া তখন রান্নাবান্নায় ব্যস্ত, অসময়ে ছেলের এই সেমাই খাওয়া শুনে খানিকটা ভ্রু কুচকে উঠল তার। ছেলেকে আদর মাখা কন্ঠে বললেন, “ বাবা, ইফতারের পর তোমাকে সেমাই বানিয়ে দেই? মা পিঁয়াজু, আলুচপ, বেগুনি...... এগুলো বানিয়েছি। এসব খাও?” “ না, না খাবোনা, আমি সেমাই খাব”, এই বলে ইফাদ চিল্লাতে লাগলো।
ছেলের চিৎকার শুনে বাবা রফিকের ঘুম ভেঙ্গে গেল। এলোমেলো পায়ে রান্নাঘরে এসে স্ত্রীকে ছেলের কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। শুনে তিনি ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করেত লাগলেন। কিন্তু “ সেমাই খাব , সেমাই খাব” বলে ইফাদ কান্না করতেই আছে।
একরকম বাধ্য হয়েই তানিয়া ছেলের জন্য সেমাই বানালেন। সেমাই দেখে তখন ইফাদের সে কি আনন্দ! স্বামী রফিকের কাছে ছেলেকে খাওয়ানোর দায়িত্ব দিয়ে তানিয়া রান্না ঘরে চলে গেলেন। ইফতারের আর বেশি সময় বাকি নেই।
খুশি খুশি ভাব নিয়ে ইফাদ সেমাই খাচ্ছে । তাঁর সেই আনন্দিত মুখটার পানে চেয়ে ভাবনায় ডুবে গেলেন রফিক সাহেব। স্মৃতিপটে ভাসতে লাগল আজ দুপুরের ঘটনা। মসজিদ থেকে যোহরের নামাজ আদায় করে ফিরছেন তিনি। আকমল আলীর বাড়ির কাছে আসতেই শুনতে পেলেন ছোট্ট একটি কন্ঠ, “ মা, আমি ভাত খাব, ও মা , ভাত দাও”। সাথে সাথেই আরেকটি মহিলা কন্ঠ শোনা গেলো, “ ভাত না, আমার মাথা খাও, বাপ তো মরে মরে বেঁচে আছেন, আর এখন জ্বালা আমার”।
আকমল আলী রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো। হঠাত প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। কাজ-কাম তো দূরের কথা, তার স্ত্রী এ বাড়ী-ও বাড়ী কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে সংসার চলে।
ইফাদের আবদার আর আকমল আলীর বাচ্চার আবদারের পার্থক্য অনেক। এই পার্থক্যটুকু রফিক সাহেবের মনে যেন অনবরত ঘা দিচ্ছে।
তিনি উঠে ধীর পায়ে রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। তানিয়া তখন রান্নাবান্না নিয়ে খুব ব্যস্ত। তাঁর কপালে আর নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম চিক চিক করছে। স্বামীকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে না থাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কিছু লাগবে?” “তুমি তো প্রতিদিনই একটু বাড়িয়েই ইফতার রেডি করো, আজ ও কি সেরকম করেছো? জিজ্ঞেস করলেন রফিক সাহেব। হঠাৎ স্বামীর এরকম প্রশ্নে তানিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকালেন এবং বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু কেন?” তানিয়া সবসময়ই ইফতারের জন্য একটু বেশিই রান্না করেন, যদি কোন মেহমান আসেন অথবা কোন গরিব এসে দরজায় দাঁড়ায়, তখন তাকে যেনো খালি পেটে ফিরে যেতে না হয় এই ভেবে”। স্বামী রফিক কখনও এ নিয়ে কোনো কিছু বলেন না। বরং এ ব্যাপারটা ভালোই লাগে তাঁর। হঠাৎ স্বামীর এই প্রশ্নে তানিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।
“না মানে...” বলে রফিক সাহেব দুপুরের ঘটনাটা খুলে বললেন। এরপর বললেন, “একটা প্যাকেটে কিছু খাবার দাও তো, আকমলদের বাড়িতে দিয়ে আসি, না জানি আজ ওরা ইফতার তৈরি করেছে কি না!”
তানিয়া খুব ভালোভাবে ইফতার রেডি করে স্বামীর হাতে তুলে দেন। রফিক সাহেব সে খাবার নিয়ে ছুটেন আকমলদের বাড়ির উদ্দশ্যে।
খাবার দেওয়ার পর পাঁচ-ছয় বছরের একটি মেয়ে খাবারটি দেখেই বলে ওঠে, “ও মা, দুপুরে ও আমাকে ভাত দাওনি, এবার দাও না গো মা ......,” রফিক সাহেব আর শুনতে চান নি, উনার দু চোখ যেন পানিতে ভিজে আসছে।
বাড়িতে এসে বারান্দায় পা দিতেই পিছন থেকে একটি কন্ঠ শোনা যায়, “বাবা গো, কিছুটা সাহায্য করো”। রফিক সাহেব ফিরে তাকাতেই দেখেন, জীর্ণ-শীর্ণ এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে, বয়সের ভারে নুঁয়ে পড়েছেন তিনি! রফিক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “বাড়ি কোথায়?” “এইতো পাশের গ্রামে”। একটু ইফতারের খুঁজে বেরিয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও পাইনি! তাই এতদূর আসা” বললেন বৃদ্ধ। “আসুন, আমার সাথে ইফতার করে নিন”- বললেন রফিক। বৃদ্ধ বললেন, “ না বাবা, অসুস্থ, বুড়ো, রোযাদার বউটা অপেক্ষা করছে আমার জন্য”। “আচ্ছা দাড়ান”- বলে রফিক ঘরে ঢুকে তানিয়াকে সব বললেন।
তানিয়া অল্প কিছু খাবার নিজেদের জন্য রেখে প্রায় সব খাবার প্যাকেটে পুরে স্বামীর হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন, “আমরা পরে রান্না করে খেতে পারব, কিন্তু এদের হয়তো আজ উপোস থাকতে হতো”!
প্যাকেটটা পেয়ে বৃদ্ধ যার পর নাই খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে করতে চলে গেলো।
তানিয়ার মুখটা কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে আছে । রফিকের জিজ্ঞাসায় সে বললো, “আকমল কিংবা ঐ বৃদ্ধের বাড়িতে আজ সেহরি রান্না হবে কিনা কে জানে! রফিক বললেন, “এটাইতো রোজার শিক্ষা , গরিব দুঃখীরা কত কষ্ট করে, কিন্তু কে তার হিসাব রাখে.........”!
“আল্লাহু আকবার.........” আজানের ধ্বনি শুনে রোজা ভাঙলেন রফিক ও তানিয়া। সারাদিনের অবসন্ন শরীরটা যেন ফিরে পেলো আপণ প্রাণ। স্বামী-স্ত্রী দুজনে অল্প খাবারটুকু ভাগাভাগি করে খেয়ে নিলেন। অল্প এই ইফতারটুকুর মধ্যে ওরা পেলো যেনো পরম এক তৃপ্তি যা ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে খেলেও পাওয়া যায়না!
পাশে বসা ছোট্ট ইফাদ বাবাকে জড়িয়ে ধরে হঠাৎ বলে ওঠে, “বাবা, আমি বড় হয়ে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করব”। ছোট্ট ছেলের এমন কথায় মা- বাবা দুজনে ওর কপালে আদরের চুমো খেলেন।
০৮-০৫-২০২০
No photo description available.

কবিতাঃ ঘুমের রাজ্যে

ঘুমের রাজ্যে
খাদিজা নাওরীন 

ঘুমের শহরে যাফির যখন,
আমি তাঁর প্রহরী তখন;

নীরবতার সঙ্গী হয়ে-
কচি মুখে আলতো ছুঁয়ে,
মিষ্টি-মধুর চুম্ আঁকি।
পাছে যদি ঘঠে ব্যাঘাত,
বাবু আমার পায় আঘাত;
সাবধানে তাই থাকি!
খেলনা গুলোর শব্দ হলে,
সব কিছু গুলবে জ্বলে,
যতনে তাই রাখি।
ঘুমের মাঝে থাকুক ক্ষণিক-
মা-পাগল ঘুম প্রেমিক।
২৯.০১.২০২০

কবিতাঃ জা' সমাচার

 জা' সমাচার
খাদিজা নাওরীন

নববধূ জা'কে পেলে ভীষণ খুশি হয়,
বোনকে রেখে আসার কষ্টের ঘটে পরাজয়!
জা'য়ের সাথে দুঃখ-সুখের হয় আলাপন,
ক্ষণিক মাঝে জা'রা হয়ে ওঠে আপনজন।
বোনের মতো একসাথে চলাফেরা করে,
ভারি মনটা হালকা হয় বসে অবসরে।
সবসময় সবার জা হয়না একই রকম,
"ভালো থাকবে, মন্দও"- এই সমাজের নিয়ম।
দলভেদে জা'রা করে অন্যকে নিয়ে গুন গুন,
দলা পাকায় অন্য জনের পান থেকে খসলে চুন।
মাঝে মাঝে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়,
দলছাড়াটার কিছু করার থাকেনা তখন, হায়!
জা'য়ে জা'য়ে দ্বন্দ্ব গড়ায় ভাইয়ে-ভাইয়ে গিয়ে,
সংসারে অশান্তির কালিমা যায় ছড়িয়ে।
হিংসার আগুন জ্বলে দাউ দাউ করে,
পুরো পরিবার ভালোবাসা হীনতায় মরে।
সংসারে শান্তির মূল, "জা'য়ে জা'য়ে মিল",
ভালোবাসার পায়রা উড়ে তবে, শান্তি কিলবিল।
০১.১২.২০১৯

Monday, 28 June 2021

কবিতাঃ শুভ জন্মদিন

 শুভ জন্মদিন
খাদিজা নাওরীন

জন্মদিন! জন্মদিন! শুভ জন্মদিন!
সময়গুলো কাটুক তোমার দুঃখহীন।
চারিদিকে বাজছে শুন খুশি-বীণ,
বয়স তোমায় বলছে-থাকো অমলিন।
আলোর মাঝেই কাটুক জীবন তোমার,
গ্রহণ কর অফুরন্ত ভালোবাসা আমার।
হাসি হাসি মুখটা যেনো দেখতে পাই,
রঙিন সময় তুমি-আমি কাটাতে যে চাই!
দুঃখ-সুখের গান যেন একসাথে গাই,
ভালোবাসার রঙিন ঘুড়ি দুজনে উড়াই।
তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি প্রিয়,
জন্মদিনের ভালবাসা গ্রহণ করে নিও!
২৭-১১-২০১৯

কবিতাঃ ভালোবাসি তোমায়

 ভালোবাসি তোমায়
খাদিজা নাওরীন

তোমায় ভালোবাসি তাই
আবেগে ভাসাই-
ইচ্ছে ঘুড়িটা।
রঙ্গিন স্বপ্ন মেলে ডানা,
ভালোবাসার আনাগোনা,
পূর্ণ এ মনটা।
কত যে ভরসার ছায়া,
হৃদয়ের মায়া-
এই তুমিটা!
ভালোবাসায় হারিয়ে যাই,
ছন্নছাড়া আর তো নাই-
এ আমিটা!
২০/১১/২০১৯
No photo description available.


কবিতাঃ প্রতি বিপরীতে ভালো থাক

 প্রতি বিপরীতে ভালো থাক
খাদিজা নাওরীন

ভালো দিয়ে দেওয়া হোক মন্দের জবাব,
আচরণে প্রকাশ হোক উত্তম স্বভাব।
মুখ দিয়ে বের হোক সুন্দর যত কথা,
প্রতি কাজে শান্তভাবে খাটুক মাথা।
ঘৃণার বদলে জয় হোক ভালোবাসার,
দূর হোক মন-মানসিকতা কষ্ট দেয়ার।
বিশ্বাস ভঙ্গের চেয়ে শ্রেয় বিশ্বস্ত আচরণই,
অন্যায়কে না করে হোক সাহায্য ন্যায়েরই।
ইনসাফ হবে না করে পাল্টা জুলুম,
প্রতি খুশিতে পাশে থাকুক মজলুম।
শত্রুত্বকে বন্দুত্ব দ্বারা করতে হবে জয়,
গোলমাল না করে ধৈর্য্য হোক হলে পরাজয়।
স্বার্থবাজির বদলে প্রাধান্য থাকুক উদারতার,
প্রতি ক্ষেত্রে পাওয়া যাক মিল কাজ ও কথার।
হীন উদ্দেশ্য মহতের কাছে ঢাকা পড়ে যাক,
প্রচার না করে দুর্বলতা কারো গোপনেই থাক।
সুনসান পবিত্রতা চারিদিকে বিরাজ করুক,
সূর্য - আলোর মতো ভালো ছড়িয়ে পড়ুক।
১০/০৭/২০১৮
No photo description available.

কবিতাঃ মন কি চায়

 মন কি চায়
খাদিজা নাওরীন

সদ্য কৈশোর ত্যাগী বালিকার
মন কি আর চায় বৃত্তবন্দি হতে?
ফুটন্ত সকাল কিংবা পড়ন্ত বিকেলের
রংগুলো কি মন চায় মুছে দিতে?
আকাশের নীলগুলো খাঁচায় ভরে
তুলি দিয়ে ছবি আঁকা,
রং কলমের বাক্সটা বন্ধ করে
মন কি চায় তালাবদ্ধ করে রাখা?
অমাবস্যা রাতে জ্যোৎস্না দেখে
বাকা চাঁদের হাত ধরে,
তেপান্তরের মাঠ পলকেই ঘুরে আসা-
মন কি আর চায় এসব দিতে ছুড়ে?
আকাশের তারাদের মিটিমিটি গল্প
ঝিঁ ঝিঁ পোকার দাড়ি-কমাহীন গান,
জাম্বুরা ফুলের মুগ্ধ দৃষ্টি-
ছাড়তে চায় কি মন এ টান?
গল্পের বইটাকে হাতে নিয়ে
রাতটাকে করে সাবাড়,
ঘুম ঘুম চোখের টল টল পা
নিতে চায় কি মন জীবনের ভার?
ঠিক দুপরে সূর্যের দিকে তাকানো
আর বৃষ্টির সাথে ঝগড়া,
বাতাসের সাথে গভীর মিতালী-
এসব ছাড়ার কেন এত তাড়া?
মন কি আর চায় চলে যেতে
এ স্বপ্নপুরী থেকে?
সদ্য কৈশোর ত্যাগী বলিকার
বিচ্ছেদী চিন্তায় মন গেছে বেঁকে!
২৫.০৪.২০১৮
No photo description available.

Friday, 25 June 2021

কবিতাঃ যাফিরের একুশ দিন

 যাফিরের একুশ দিন
খাদিজা নাওরীন

যাফির সোনা পা দিয়েছে
একুুশ তম দিনে,
তাইতো আজি খুশির হাওয়া
বইছে মনে মনে।
তালে তালে বৃষ্টিরা আজ
বলছে খুকু সোনা,
তোমার জন্য অনেক অনেক
ভালোবাসা বোনা।
উদার আকাশ উদার হয়ে
বলছে তোমায় শোনো,
তোমা থেকে কষ্ট কোনো-
কেউ কখনো পায়না যেনো।
জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে
অনেক বড় হও,
পৃথিবীটা বলছে যে ওই
অমর হয়ে রও।
দোয়া করি জীবণ তোমার
আলোকিত হোক,
তোমার তরে জেগে থাকুক
বহু ব-হু সুখ।
১১/০৭/২০১৯

কবিতাঃ নব দিনের প্রত্যয়

          নব দিনের প্রত্যয়
               খাদিজা নাওরীন

নব দিনের নব গানে বাজুক নব সুর,
ধরা থেকে অমানিশা দূর হয়ে যাক দূর।
সব সময়েই লেগে থাকুক নতুনের রেশ,
ঘুণে ধরা সমাজের হয়ে যাক শেষ।
ভালোবাসায় ভরে উঠুক সকল প্রাণ,
সুস্হভাবে বেঁচে থাকুক সংস্কৃতির মান।
কুঠির-অট্টালিকার সবাই থাকুক ভালো,
মানব মনের আধাঁর কেটে হাসুক আলো।
চারিদিকে বয়ে যাক এমন সব গান-
নিরাপদে বেঁচে থাকুক প্রতিটি প্রাণ।
নব বছর সবার কাছে নিয়ে আসুক জয়,
ভালো থাকি ভালো রাখি-হোক এই প্রত্যয়।
১৪/০৪/২০১৯

কবিতাঃ আমার দুঃখ

 আমার দুঃখ
  খাদিজা নাওরীন

আমি বাংলা ভাষা, আমি দুখিনী বাংলা ভাষা,
হারতে বসেছে আমার সকল আশা- ভরসা।
কত বর্ণিল ইতিহাস আমার যে আছে!
সন্তানেরা এসব কিন্তু ভুলতে বসেছে।
বাংলার সাথে বিশ্রিভাবে অন্য ভাষা মেশায়,
অন্য ভাষায় অনেক মজা খুঁজে নাকি পায়!
বিনোদন পায়না বুঝি অন্য ভাষা ছাড়া,
ভিন্ন ভাষা তাঁদের নাকি করছে ভীষণ তাড়া।
এত্ত এত্ত লজ্জা আমি রাখি যে কোথায়,
কত সোনার ছেলে প্রাণ দিয়েছে রক্ষার্থে আমায়।
তেরশ' আটান্নর একটি বিকেল বেলা-
রাজপথে বয়েছিল মোর ছেলেদের রক্তের নালা।
ওরা যে নেই, আজ তাই আমি অসহায়,
এড়িয়ে যাচ্ছে আমায় নবীন- প্রবীনেরা, হায়!
ভীষণ স্মৃতিকাতর আমি, মনে জ্বলে আগুন,
একুশে ফেব্রুয়ারিতে হারিয়ে গেছে আটই ফাল্গুন।
বাংলা মাস যায়-আসে, রাখে হিসাব কেউ কি?
ভীষণ একাকী হয়ে পড়েছি আমি, ভীষণ একাকী।
নিরবে-নিভৃতে খুবই কাঁদি, শুনেনা তা কেউ,
অবিনাশী বর্ণমালার বুকেও বয়ে যায় ঢেউ।
আমি দুখিনী বাংলা, আমি বাংলা ভাষা,
মেকি নয়, চাই হৃদয় গভীরের ভালোবাসা।
২০.০২.২০১৮

Tuesday, 22 June 2021

কবিতাঃ এসেছে বসন্ত

 এসেছে বসন্ত
খাদিজা নাওরীন

নব জীবণের ঢেউ লেগেছে আজ বসন্ত দিনে,
রঙ্গিন প্রজাপতি খেলা করে ফুলে ফুলে বনে বনে।
জীর্ণতা সরিয়ে শীতের উঠেছে প্রকৃতি সেজে,
ভাঙ্গা গলা সুস্হ হবে কোকিলের এই ঋতুরাজে।
আমের মুকুলের ঘ্রাণে মেতে উঠেছে চারিদিক,
গাছের নতুন কুড়িতে খেলা করে আলোর ঝিলিক।
রঙ্গিন বুনোফুল বাড়িয়ে দেয় সৌন্দর্য বনের,
ক্ষণে ক্ষণে মন মাতিয়ে দেয় সৌন্দর্য নীলাকাশের।
চারিদিকে এতো আলো এতো হাসি এতো যে গান,
তারপরও মনটা যেন ব্যথায় হয় খান খান!
বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল ঢেলে সোনার ছেলেরা-
সে ভাষার জন্য, যে ভাষায় আজ বলছি কথা আমরা।
তাইতো জানিয়ে দেয় পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়া-কাঞ্চন,
হারিয়ে যাওয়া প্রিয় ভাইটির ছলকে দেয়া রক্ত-মিশ্রণ।
এ যে রক্তলাল বসন্ত, এ ফাগুনে যে আগুন ঝরে,
বসন্তের আবেদন তাইতো হৃদয়ের অনেক গভীরে।
১৭.০২.২০১৮

কবিতাঃ প্রশান্তির সবুজ উপত্যকা

প্রশান্তির সবুজ উপত্যকা
   খাদিজা নাওরীন

প্রশান্তির এক সবুজ উপত্যকায় আমার বাস
যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি,
ধরাকে সরা জ্ঞান করে না কেউ
চোখে ভাসে শুধু প্রাপ্তি আর প্রাপ্তি।
দেয়না বাধা কেউ ফুটতে গোবরে পদ্মফুল,
কারো ভুলে কেউ বাজায় না ডামাডোল।
চারদিক মুখরিত পাখির কলকাকলিতে আর-
গাছে গাছে ঝুলে থাকে ফুলের বাহার।
এখানে থাকেনা কেউ না করে আহার,
প্রশান্তির ছায়া আছে নেই কোনো আধার।
আমি যখন-তখন যাই চলে সে উপত্যকায়,
কিছু সুখ, কিছু সুন্দর অনুভূতির আশায়।
বাস্তবতা কিন্তু আমার অন্ধকারে ঘেরা-
এদিকে আহাজারি তো ওদিকে উল্লাস,
কল্পনার উপত্যকার মতো একদিন বাস্তবতা হবে
যেদিন ফেলব শান্তির নিশ্বাস, এ আমার বিশ্বাস।

৩১-১০-২০১৭

Saturday, 19 June 2021

কবিতাঃ হেমন্তে

 হেমন্তে
খাদিজা নাওরীন

শীতের গল্প নিয়ে এলো হেমন্ত-
প্রকৃতির গায়ে নব রুপ ফুটাতে,
কালো মেঘের দল আকাশ ছাড়া
দেখা যায়না পাগলামো ছুটতে।
সূর্যের আলসেমি শুরু হয়ে গেলো,
রাতগুলো তাড়াতাড়ি ছড়ায় কালো।
মমতাময়ী নারীর মতো হেমন্ত চলে,
বৈরাগ্য-বিষণ্নতার কথা বলে বলে।
ধানের স্তূপে ভরে কৃষকের উঠোন,
চাষী বউ পিঠা বানায় মনের মতোন।
এসময় ঢেউ লাগে বাংলার রুপসাগরে,
হেমন্তের আগমনে মন দোলে রে।।
২৭.১০.২০১৭

কবিতাঃ খোদার মহিমা

 খোদার মহিমা
  খাদিজা নাওরীন

নুঁয়ে পড়ে গাছ কেন ফলবাণ হয়ে-
নদী কেন চলে যায় একই দিকে বয়ে?
পানি মাঝে মাছ থাকে কেমন করে-
স্বচ্ছ আকাশ মেঘে যায় কেমনে ভরে!
প্রতিদিন ছড়ায় সূর্য কিভাবে আলো?
নিমিষেই দূর হয় আধাঁর-কালো!
প্রতিরাত চাঁদ-তারা কেমনে জাগে!
এত ফুল কিভাবে ফুটে ফুল বাগে?
প্রজাপতির এতো রং এলো কোথা থেকে!
ঠান্ডা-গরম কিভাবে বসে শরীরে ঝেঁকে?
এতো সব জীব-উদ্ভিদ কার হলো দান-
কেন বয় এতো এতো নিয়ামতের বাণ!
এ আমার সৃষ্টিকারী মহিমা খোদার,
এতো সব ভালোলাগা, সৃষ্টি যে তাঁর।
আকাশ-ভূমির সবকিছু গায় তারি গুণগান,
মহান রব আল্লাহ, তিনি পবিত্র- সুমহান।
২১.০৬.২০১৮

কবিতাঃ ভালোবাসার প্রহর

ভালোবাসার প্রহর
খাদিজা নাওরীন

তোমাকেই ঘিরে আজ জীবনের গান,
অবাক করা এক ভালোলাগার টান!
গভীর আবেগে শুধুই ভেসে চলা,
লাজুক নয়নে নয় "ভালোবাসি" বলা-
উৎসুক চোখেই প্রকাশ ভালোবাসা,
নব জীবনের স্বপ্ন পানেই ভাসা।
শত শত সুখপাখি খুঁজি তোমাতে,
বুঝি- আছো মিশে তুমিও আমাতে।
হরদম খুনসুটি ইচ্ছের লুটোপুটি-
ঘর ছেড়ে মাঠ শেষে উড়ন্ত মন দুটি।
পাশাপাশি চলে যাই হাতে ধরে হাত,
আবেগের ছোঁয়াতেই কাটে দিন-রাত।
হাসাহাসি-মাতামাতির বিরাট এক চর,
ভালোলাগায় আছে মিশে ভালোবাসার প্রহর।
১৭.০৯.২০১৮

Friday, 18 June 2021

কবিতাঃ বৃষ্টি পড়ছে

বৃষ্টি পড়ছে

খাদিজা নাওরীন
ছন্দ তালে বৃষ্টি পড়ছে
সবুজ সবুজ পাতায়,
বৃষ্টি পড়ছে তালে তালে
খুকুর হলুদ ছাতায়।
বৃষ্টি পড়ছে খালে- বিলে
আরো ভরছে পুকুর,
ব্যাঙগুলো সব ঘ্যাঙর ঘ্যাঙে
তুলছে সুখের ঢেকুর।
বৃষ্টি পড়ে দেয় ভিজিয়ে
পাখিগুলোর সুখ,
বৃষ্টি হলে ঘর ছাড়েনা
অলস কোনো লোক।
২৭.০৮.২০১৭

Thursday, 17 June 2021

আমার সোনামণির ঘুম

            রাত সাড়ে এগারোটা বাজে, যাফিরের ঘুমের সময় এখন। বিছানায় ছড়া-কবিতা-গল্প বলে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো আমাদের অভ্যাস, যদি এরকম গুমাতে না চায় যাফির, তাহলে ওর বাবা কোলে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুম পাড়ান, এতে অবশ্য ও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে।

          আজ ও যাফিরকে ওর বাবা দ্বিতীয় পদ্ধতিটা প্রথমেই প্রয়োগ করলেন, প্রায় ৩০ মিনিটের মতো যাফিরকে কোলে নিয়ে হাটলেন, কিন্তু যাফিরের চোখে ঘুমের ছিঁটেফোটাও নেই, ও হাঁসছে আর সেই সাথে ঘুমের মাসি-পিসি আমাদের বাড়ি ছেলে পালাচ্ছে! 

           যাক, এবার আমার পর্ব শুরু, রুমটা আধো অন্ধকার করে যাফিরকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প শুনালাম পাঁচ মিনিট, তারপর কবিতা শুনালাম আরো দশ মিনিট, তবুও ওর চোখে শুধু আলো...... এরপর আরো দশ মিনিট ঘুমানোর দুয়া, সুরা পড়লাম ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে, সে সময় ও চুপচাপ হয়ে আছে। ঘুমিয়েছে ভেবে ওর হাতটা যেই ঠিক করতে যাবো অমনি যাফির আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে। ওর চাহনির মাঝে কেমন যেনো একটা হতাশা ভাব! আমার বুঝতে বাকি রইল না কিছু! যাফিরকে আদুরে কন্ঠে বললাম, বাবা তুমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর, ইনশাআল্লাহ ঘুম আসবে। যাফির আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। প্রায় এক মিনিট পর ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল! আমি বুঝতে পারলাম যে আমার ছেলেটা এই মূহূর্তে অসহায় বোধ করছে, কারণ মা-বাবা দুজন মিলে ওকে ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন, এ জন্য হয়তো মনে মনে ও কষ্ট পাচ্ছে, তবে একবার ও যাফিরকে আমরা কেউই বলিনি যে তোমাকে ঘুমাতেই হবে।

           এবার আমি যাফিরকে আশ্বস্ত করে বললাম, "সোনামণি, তোমার কি ঘুম পাচ্ছেনা?" যাফির আস্তে আস্তে উত্তর দিল, "না"। বললাম "কোন সমস্যা নেই বাবা, তুমি কি উঠে পড়বে?" যাফির খুশি খুশি ভাব নিয়ে বলল, "উঠব"। আমি বিছানা থেকে নামার আগেই যাফির নেমে পড়ল। 

          এবার যাফির খুব খুশি। পাঁচ মিনিটের মত যাফির সারা ঘরে  দৌড়াদৌড়ি-লাফালাফি করেছিল। তারপর ওর বাবা বললেন, "চল আমরা ঘুমাই"। যাফির চনমনে ভাব নিয়ে বলল, "ঘুমাই"। এর কিছুক্ষন পর যাফির ঘুমিয়ে পড়ল।

           নাহ, যাফিরকে আমরা ভয় দেখাই নি, ওর ঘুমানোর জন্য কোন ও চাপ ও দেই নি, শুধু ওর রুঠিন মতো ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এতে যখন দেখলাম কাজ হচ্ছেনা, ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি, কারন এটা জানি যে আমার ছেলের ঘুম আসলে অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন ঘুম আসছেনা বলেই ঘুমাতে পারছেনা , এতে আমরা মোটেই বিরক্ত হইনি, উপরন্তু যাফিরের এই দোলাচল আমরা খুব উপভোগ করি।

         যাফিরকে ঘুমানোর জন্য যদি চাপ দিতাম, জোর জবরদস্তি করতাম, তবে এটা নিশ্চিত যে, আমার দুই বছরের বাচ্চাটার ঘুমের প্রতি একটা ভীতি কিংবা অনীহা ভাব চলে আসবে, এবং তা আমরা করিও না।

        আমরা যাফিরের সাথে যে আচরন করব, সেটাই ওর আচরনে প্রতিফলিত হবে! আমরা চাই আমাদের যাফির নির্ভয়ে বড় হোক, উপভোগ করুক এই জীবন সকাল।

        ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল শিশু।

                                  ১৭ জুন, ২০২১    

কবিতা : ঈদের চাঁদ

        ঈদের চাঁদ    খাদিজা নাওরীন ঈদের ঘোষণা দিল ঐ চাঁদ উঠে আকাশে, খুশির জোয়ার চলছে তাই  বাতাসে- বাতাসে। ঐ ঈদের চাঁদে যত খুশি লুকানো! প্রকা...